বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পদত্যাগের দাবি তুললেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তিনি ব্যবসায়ী বলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ কারও কারও। এর জবাব দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি ৫৪ বছর ধরে রাজনীতি করেন। রাজনীতিবিদ হিসেবেই তার মূল পরিচিতি। প্রধানমন্ত্রী চাইলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
সোমবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বরাদ্দে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ এটিকে মানুষ সিন্ডিকটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে।
মোকাব্বির বলেন, অনেকে সংসদে বলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমি এভাবে বলতে চাই না। এত কিছুর পরও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না।
এর জবাব দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যাখ্যা দিয়ে টিপু মুনশি বলেন, কথাটা হলো দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বারবার বলছেন মানুষ কষ্টে আছেন। মানুষকে বলছেন সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। আজকে আমরা কী আমাদের জন্য এই অবস্থায় এসেছি? বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কিন্তু আমাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাজারে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসাথে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার- আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়ত করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।
নিজেকে ব্যবসায়ী বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টিপু মুনশি বলেন, বারবার একটি কথা ওঠে, আমি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ ব্যবসার অনেক আগে থেকেই আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমি কিন্তু ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি ব্যবসা করি আজকে ৪০/৪২ বছর। কিন্তু ঘুরে ফিরে কেউ বলেন না আমি রাজনীতিবিদ।
আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়ত করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।
এদিকে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। … বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এটা চাইলে অবশ্যই সম্ভব।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েক মাসে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ছে না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, বাজারে গেলে মানুষের মাথা গরম হয়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিকমত বাজার নজরদারি করছে না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে, তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’মানুষও এটি বোঝে। শুধু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় চাপালে হবে না।সুত্র: ঢাকামেইল
পাঠকের মতামত